উৎপাদিত মাল্টা থেকে প্রতি বছরই তার আয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। অধিক লাভজনক হওয়ায় তাকে অনুসরণ করে স্থানীয় আরও অনেকেই আগ্রহী হয়ে উঠেছেন মাল্টা চাষে।
নওগাঁ জেলার ঠাঁ ঠাঁ বরেন্দ্র ভূমি অধ্যুষিত পোরশা উপজেলা। যেখানে উঁচু নিচু জমিতে পানি ধরে রাখা খুবই কঠিন। আর এজন্য প্রায় প্রতি বছরই ধান চাষ করে লোকসানের মধ্যে পড়তে হয় এ অঞ্চলের কৃষকদের। লাভজনক বিকল্প ফসলের দিকে আগ্রহী হওয়ায় জেলার পোরশা, সাপাহার, নিয়ামতপুর ও পত্নীতলা উপজেলায় গড়ে উঠছে প্রচুর পরিমাণ আমবাগান।
তবে এর পাশাপাশি কেউ কেউ লাভজনক ভিন্ন ফসল উৎপাদনের নজির সৃষ্টি করেছেন। তাদেরই একজন পোরশা উপজেলার তেঁতুলিয়া গ্রামের সৌখিন চাষী ওবায়দুল্লাহ শাহ। নিজের ৫৫ বিঘা জমিতে তিনি গড়ে তুলেছেন মাল্টাসহ বিভিন্ন প্রজাতির আম এবং পেয়ারা বাগান। এর মধ্যে প্রায় ১৮ বিঘা জমিতেই করছেন মাল্টার চাষ।
এই বাগান গড়ে তুলতে ওবায়দুল্লাহর খরচ হয়েছে প্রায় ১০ লাখ টাকা। তার জমিতে উৎপাদিত মাল্টা বাগানের মধ্যে আট বিঘা জমির বাগানে বিগত তিন বছর ধরে মাল্টা ধরছে আর ১০ বিঘা নতুন বাগান। এই আট বিঘায় রয়েছে মোট এক হাজার মাল্টা গাছ। প্রথম বছর প্রতি গাছে ৭-৮ কেজি করে মাল্টা উৎপাদিত হয়েছে।
এ বছর মোট প্রায় ৮ হাজার কেজি মাল্টা উৎপাদন করেছেন ওবায়দুল্লাহ।
দ্বিতীয় বছর তার প্রতি গাছে কমপক্ষে ২০ কেজি করে মাল্টা উৎপাদিত হয়েছে যার বিক্রয় মূল্য ছিল প্রায় ২০ লাখ টাকা।
আর তৃতীয় অর্থাৎ চলতি বছর প্রতি গাছে কমপক্ষে ৪০ থেকে ৫০ কেজি করে মাল্টা ধরেছে। ওবায়দুল্লাহর মাল্টা বিক্রির প্রধান বাজার নাটোর। এ বছর তিনি ৪০ থেকে ৫০ লাখ টাকার মাল্টা বিক্রির আশা করছেন।
এছাড়াও ওবায়দুল্লাহ তার মোট ৫৫ বিঘা জমির সমন্বিত বাগানে বিভিন্ন প্রজাতির আম এবং পেয়ারাও চাষ করেছেন। এ বছর কেবলমাত্র পেয়ারা বিক্রি করেছেন প্রায় ৭ থেকে ৮ লাখ টাকার। কিছু জমিতে আম, পেয়ারা এবং মাল্টার চারাও তৈরি করেছেন। সেখান থেকেও আয় করেছেন প্রায় ১০ লাখ টাকা।
এদিকে ওবায়দুল্লাহ শাহর মাল্টা চাষে সফলতা এবং আর্থিক লাভবান হওয়া প্রত্যক্ষ করে এলাকার অনেক চাষী তাদের জমিতে মাল্টা চাষ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। নিয়মিতই তারা ওবায়দুল্লাহর পরামর্শ গ্রহণ করছেন।
পোরশা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাহফুজ আলম জানান, বরেন্দ্র অধ্যুষিত এসব উঁচু জমিতে মাল্টা চাষের ভালো সম্ভাবনা রয়েছে। উপজেলার তেঁতুলিয়া গ্রামের ওবায়দুল্লাহ শাহের সফলতা এর প্রমাণ। তাকে অনুসরণ করে এলাকার অনেকেই এখন মাল্টা চাষের দিকে ঝুঁকছেন।
কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে এলাকার মাল্টা চাষীদের সব ধরনের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে বলেও জানান উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা।